
প্রকাশিত: Mon, Feb 6, 2023 4:38 PM আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:26 PM
মাঘী পূর্ণিমার রাত এবং গৌতম বুদ্ধ
রাজিক হাসান : মাঘী পূর্ণিমার রাত ছিলো ৫ ফেব্রুয়ারি। কথিত আছেÑ এমনই এক পূর্ণিমা রাতে মাত্র ২৯ বৎসর বয়সে গৌতম বুদ্ধ স্ত্রী-পুত্র-রাজ্য সব মায়া ছেড়ে গৃহত্যাগ করেন। এরপর তিনি কঠোর সাধনায় সম্পূর্ণ বুদ্ধত্ব অর্জন করেন। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে ‘বোধি’ বলা হয়। বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে নিজের মুক্তি লাভকে নির্বাণ বলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া, বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। দুঃখ একটি বাস্তবতা এই দুঃখের কারণ হচ্ছে কামনা-বাসনা-বন্ধন। আজকের আকাশে ঝকঝকে গোল থালার মতো একটি রুপালি চাঁদ। আমার বন্ধু গৌতম বুদ্ধের একটি গল্প বলি আজ। বুদ্ধ তখন গহীন জঙ্গলে গভীর ধ্যানে আচ্ছন্ন। সুন্দর পোশাক পরিহিত কিছু যুবক পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। যুবকদের প্রধান বুদ্ধকে প্রণাম করে বলল, ‘হে সাধু, আপনি কি কোন অল্পবয়সী স্ত্রীলোককে এই পথে দৌঁড়ে যেতে দেখেছেন’? বুদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন- ‘কেন তুমি তাকে খুঁজছো’? যুবকটি জানালো তারা বারানসি থেকে আসছে। গতকাল এই বনে এসেছে।
সঙ্গে তাদের নানা বাদ্যযন্ত্র ও এক অল্পবয়সী স্ত্রী লোক ছিল। গানবাজনা আর নাচের পর খাবার খেয়ে তারা জঙ্গলের মাটিতেই ঘুমিয়ে পরে। ঘুম থেকে উঠে তারা দেখে স্ত্রীলোকটি তাদের মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়েছে। তখন থেকেই তারা ওই স্ত্রীলোকটিকে ধাওয়া করছে। বুদ্ধ শান্তভাবে যুবকদের সবাইকে দেখলেন আর বললেন, বলতো বন্ধুরা, এখন স্ত্রীলোকটিকে খুঁজে বের করা নাকি তোমাদের নিজেকেই খুঁজে বের করা কোনটি বেশি জরুরি হবে। যুবকেরা চমকে গেল। একজন বলে উঠলো, হে সম্মানিত সাধু, মনেহয় প্রথমে আমাদের নিজেদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। বুদ্ধ বলে উঠলেন, জীবনকে শুধু খুঁজে পাওয়া যায় বর্তমান সময়ে। কিন্তু আমাদের মন খুব কম সময়ই বসবাস করে এই বর্তমানে। এর পরিবর্তে সে ধাওয়া করে অতীতে বা সুদূর কোন ভবিষ্যতে। আমরা মনে করি আমরা নিজের সঙ্গেই আছি, কিন্তু আসলে খুব কমসময়েই আমাদের যোগাযোগ থাকে নিজের সঙ্গে। তারেচেয়ে বরং আমাদের মন অধিক ব্যস্ত থাকে গতকালের স্মৃতি অথবা আগামীকালের স্বপ্নকে নিয়ে। দেখো ওই কচি পাতাগুলোকে। সূর্যের রশ্নিতে কেমন ঝলমল করছে।
কখনও কি দেখেছো নির্মল ও স্ফুরিত হৃদয়ে পাতাগুলোর সবুজ রং? এই সবুজ ছায়া হচ্ছে জীবনের এক বিস্ময়। বুদ্ধের কথায় প্রত্যেকের চোখ সবুজ পাতাগুলিতে স্থির হলো। তারা দেখতে পেল, সবুজপাতাগুলো কেমন ঝিরিঝিরি বাতাসে দুলছে। একটুপর বুদ্ধ সবাইকে তার ডান পাশে বসতে বললেন। ‘আমি দেখছি তোমার সঙ্গে একটি বাঁশি আছে। অনুগ্রহ করে কি আমাদের জন্য বাজাবে’? বুদ্ধ অনুরোধ করলেন। যুবকটি লজ্জিত হলো, তারপর সে তার বাঁশিটি ঠোঁটে নিয়ে বাজাতে শুরু করল। অন্যসবাই অনন্যচিত্তে শুনতে লাগলো। বাঁশিতে ছিল এক হৃদয়ভাঙা প্রেমিকের কান্নার সুর। করুন সুরে সে যেন কাঁদছে তো কাঁদছেই। যখন যুবকটির বাঁশি থেমে গেল তখন যেন বিষ্ণণতার এক পর্দা উঠল শেষবিকেলের অরণ্যতে। চারিদিকে সবাই যেন চুপ হয়ে আছে, যেন থমকে গেছে সবকিছু। হঠাৎ যুবকটি তার সেই বাঁশি বুদ্ধর পায়ের কাছে রেখে বলে উঠল, হে সন্যাসী, অনুগ্রহ করে এবার আপনি সুর বাজান। বুদ্ধ মৃদু হাসল। কিছু যুবকেরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল যেন সেই যুবকটি বোকার মতো কিছু বলেছে। আসলেই তো কেইবা শুনেছে সন্যাসী বাঁশি বাজাতে পারে।
কিন্তু বুদ্ধ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাঁশিটি নিজের হাতে নিল। কয়েকটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাঁশিটি ঠোঁটের কাছে উঠালো। সমগ্র বনভূমি যেন এক অনাবিল শান্তির চাদরে ঢেকে গেল। যুবকেরা বুদ্ধর চারিদিকে গোল হয়ে বসল। তারা প্রত্যেকেই অরণ্যের বিস্ময়ে, বুদ্ধ, আর বাঁশিতে আর তাদের বন্ধুত্বের বন্ধনে হারিয়ে গেল। এরপর যুবকটি বুদ্ধকে বলল, আমি জীবনে এতো সুমধুর সুর কাউকে বাজাতে শুনিনি। আপনি আমাকে আপনার শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করবেন? আমি যেন শিখতে পারি। বুদ্ধ মৃদু হেসে উত্তর দিল, আমি যখন বালক ছিলাম তখন আমি বাঁশি বাজাতে শিখি। কিন্তু আমি গত সাত বছরে একবারও আমি কোন বাঁশি বাজাইনি। যদিও আমার আজকের তোলা সুর আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।
যুবকটি জিজ্ঞেস করে, আপনি কী করে সাত বছর কোন চর্চা না করেই বাঁশি বাজানো উন্নত করেছেন? উত্তরে বুদ্ধ বললেন- বাঁশি বাজানো সম্পূর্ণভাবে শুধু চর্চার উপর নির্ভর করে না। আমি এখন আগের চেয়েও ভালো বাজাতে পারি কারণ আমি আমার প্রকৃত সত্ত্বাকে খুঁজে পেয়েছি। তুমি শিল্প বা সঙ্গীতের সর্বোচ্চ চূড়ায় তখনই পৌঁছাতে পারবে যখন তুমি নিজের হৃদয়ের অনতিক্রম্য সৌন্দর্যকে খুঁজে পাবে। তুমি যদি সত্যিই খুব ভাল বাঁশি বাজাতে চাও, আগে তোমার সত্যিকারের তোমাকে খুঁজে নাও। গল্পটি ‘ঙষফ চধঃয ডযরঃব ঈষড়ঁফং’ নু ঞযরপয ঘযধঃ ঐধহয থেকে অনুবাদ। (অনুবাদটি আমার করা, কেমন হয়েছে জানিও বন্ধুরা)। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
